Электронная библиотека » Amy Blankenship » » онлайн чтение - страница 2

Текст книги "সময়ের অন্তর"


  • Текст добавлен: 5 августа 2021, 00:40


Автор книги: Amy Blankenship


Жанр: Жанр неизвестен


сообщить о неприемлемом содержимом

Текущая страница: 2 (всего у книги 5 страниц)

Шрифт:
- 100% +

অধ্যায় ২ "অপর দিক"

সময়ের অন্তরের অপর দিকে, দু’বছর পরে... এবং ভবিষ্যতে এক হাজারেরও বেশি বছর পরে।

চিঠিটা হোগো মঠের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছিল। কিছু আগেই পত্রবাহেকর দেওয়া অতি সুন্দর দেখতে ওই খামটাকে হোগোদাদু তার সঙ্গে করে নিয়ে তার সেই টেবিলের দিকে ফিরে যেতে যেতে সেটাকে দেখলেন, যেখানে বসে তিনি চা পান করছিলেন। দরজায় কড়া নাড়া শোনার আগে অবধি তিনি তার বেশিরভাগ সময়ে অতি সক্রিয় থাকা বাড়ির শান্তি ও নীরবতা উপভোগ করছিলেন।

বাকি সকলেই সেই সন্ধ্যের জন্য বাইরে বেরিয়েছিল। তামা তার বন্ধুদের সঙ্গে শহরের গেম ক্লাবে, আর কিওকো লাইব্রেরিতে পড়তে গেছিল, অন্যদিকে, মিসেস হোগো কিছু মুদিখানা সামগ্রী কেনাকাটার জন্য বেরিয়েছিলেন।

টেবিল থেকে একটা ছুরি তুলে নিয়ে দাদু সোনালি তারের প্রান্তের খামটির একপ্রান্তে চালিয়ে দিলেন। তারপর ভিতরে হাত চালিয়ে সোনালি তারের পান্তযুক্ত উচ্চমূল্য প্রদত্ত চিঠিটা বের করে আনলেন এবং পড়তে শুরু করে দিলেন। তিনি যত পড়ছিলেন তার চোখ ততই বিস্ফারিত হচ্ছিল। বিষয়টা ছিল একটা স্কলারশিপ প্রসঙ্গে, শহরের অপর প্রান্তের শহরতলির কোন এক অতি ব্যয়বহুল স্কুলের সম্পূর্ণ পঠন-পাঠনের স্কলারশিপ।

"কে.এল. বিশ্ববিদ্যালয়।" বহু বছর পর প্রথমবার তার বৃদ্ধ কণ্ঠে বিস্ময়ের শ্বাসাঘাত দেখা গেল। তাতে লেখা ছিল, সমস্ত খরচ মিটিয়ে দেওয়া হবে, এমনকি সে যে ছাত্রাবাসে থাকবে তার ভাড়াও, এবং তাতে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতার স্বাক্ষর ও তার নামের অদ্যাক্ষর কে.এল. লেখা ছিল।

দাদুর বৃদ্ধ মুখটাতে বহু বছর পর চওড়া হাসির রেখা দেখা গেল। কিওকো আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়তে চলেছে। তিনি জানতেন ও এ ব্যাপারে খুবই চিন্তিত ছিল যে, স্কুলে এতদিন ধরে না যেতে পারার কারণ হয়ত ওকে আর কোন স্কুলেই নেওয়া হবে না এবং ওর পড়াশোনা হয়ত শেষই হয়ে যাবে, কিন্তু এখন ও সব্বাইকে টপকে সেই স্কুলে যেতে চলেছে যেটা এই অঞ্চলের অন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের থেকে ভাল।

কিছু একটা চিন্তায় তার কপালে ভাঁজ পড়ল... এটা এমন একটা স্কুলে যেটাতে ভর্তি হতে পারাটা সবচেয়ে কঠিন ব্যাপার, কারণ তার চেনা কাউকেই তিনি আজ অবধি এই স্কুলে ভর্তির জন্য আবেদন করে সফল হতে দেখেননি। আবার এই রটনাও আছে যে, এই স্কুলে নাকি শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম যেহেতু এখানে ভর্তি হতে গেলে অত্যন্ত উচ্চমানের আবশ্যকতা পূরণ করতে হয়। ও কীভাবে এমন একটা স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেয়ে গেল যার জন্য ও আবেদন পর্যন্ত করেনি?

তার মাথায় গত দু’বছরের মধ্যে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা ঘোরাফেরা করতে লাগল। মঠ থেকে সব কিছু ভুলে গিয়ে কিওকো যখন ফিরে এসেছিল তখন তার স্বাভাবিক হতে বেশি কিছুটা সময় লেগে গেছিল। সে হঠাৎ করে কবে ফিরে এসেছিল সে ব্যাপারে এরা সকলেই বেশ বিভ্রান্ত ছিল, কারণ ও চলে যাবার পর থেকে ওর আর বিশেষ কিছু মনে ছিল না।

হোগো পরিবার জানত সে কোথায় গেছিল কারণ ও বহুবার পা ফসকে সময়ের তোরণে এপাশ-ওপাশ করেছিল... কিওকোই একমাত্র মেয়ে যে হঠাৎ করেই সব কিছু ভুলে বসেছিল।

তার এমনকি তয়ার কথাও মনে ছিল না। কিন্তু দাদুর কাছে সে সব ঠিকই ছিল, কারণ সময়-অতিক্রমী রক্ষকের ব্যাপারে ও যদি ভুলে যায় তাহলে তার থেকে ভাল আর কিছু হয় না। অন্য ওই দিকের ব্যাপারে এবং যে বিপদ তার সাথে এসেছিল সে সব কিছু যে ও ভুলে গেছে সেটা ভালই হয়েছে।

কিছুক্ষণের জন্য তার চোখে বিষাদের ছায়া নেমে এসেছিল। হ্যা, যা ঘটেছিল পরিবারের সকলেই তার প্রায় সবটাই জানে, কারণ কিওকো দুই বিশ্বের মধ্যে যাতায়াত করত এবং যখন সে তাদের দিকে থাকত, তখন সে তাদের সবাইকে সবচেয়ে বেশি আনন্দে রাখত। বৃদ্ধ এ-ও জানতেন যে, কিওকো এমন অনেক কিছুই তাদের থেকে লুকিয়ে রাখতে পেরেছিল যা ও চাইত না সকলে জানুক। সেই জিনিসগুলো এরা আর কোনদিনই জানতে পারবে না কারণ এখন ও সেই সব গোপন রহস্যই ভুলে গেছে।

এমনকি তার ছোট ভাই তামা তাকে অনেক কিছুই বলেছিল যা সে জানত; কিন্তু সে সব শুনে ও শুধু মাথা নেড়েছিল এবং চোখ নামিয়ে নিয়েছিল। ওর শুধু মনে ছিল যে, ও সেই অন্য জগতে একেবারে একা ছিল। দৈত্য পরিপূর্ণ একটা জগতে।

আনন্দের টানে দাদুর ঠোঁট দুটো পাতলা হয়ে এসেছিল। তিনি জানতেন সব আবার ঠিকঠাক হয়ে গেছিল কারণ কিওকো তাকে বলেছিল সে তার অন্তরের মধ্যে অনুভব করতে পারে যে, রক্ষকের অন্তর-স্ফটিক আবার তার কাছে ফিরে আসছে, আর সেটা হয়ে এসেও গেছে। কয়েক সপ্তাহ পরে, সে তার স্কুলের কাজে নিজেকে ডুবিয়ে দেয় এবং খুব ভাল ফল করতে শুরু করে। দাদু সদর দরজা খোলার শব্দ পেলেন এবং তার মুচকি হাসি প্রসারিত হল।

তিনি চিঠিটাকে একটা সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে চুমু খেতে খেতে তার নাতনীকে রান্নাঘরে প্রবেশ করতে দেখছিলেন... কিওকোর খুব ভাল লাগবে।

*****

তিন সপ্তাহ পরে...

অতীতের কোল থেকে বেরিয়ে আসা মেয়েটা যখন স্কুলের দিকে যেত তখন স্বর্ণাভ আলোয় ভরা চোখ তাকে দেখত। সে ওকে খুঁজে পেয়েছিল এবং কোনভাবে সে আবার সবকিছু ঠিক করে দেবে। সে তারা মানবদেহ কিছুক্ষণের জন্য খসে গেছে বলে অনুভব করেছিল এবং তার চোখে সোনা-ঝড়া স্মৃতিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছিল সেই দৃশ্যের কথা ভেবে যা সেই মারাত্মক যুদ্ধভূমিতে ঘটে গেছিল।

জানালার ও প্রান্ত থেকে ঘরে প্রবেশ করা সকালের সূর্যালোক ঘরের দেওয়ালে তার পিছনে যে ছায়া তৈরি করেছিল তাতে একটা অদ্ভুত অবয়ব ধরা পড়েছিল যার পিছনে পাখা ছিল। সে তার পাঞ্জা সমেত বাহু উপরে তুলল এবং তার চোখের দৃষ্টি সংকুচিত করল, আর তার পাঞ্জা দুটোকে ধীরে ধীরে মানব পরিধানের মধ্যে মিলিয়ে যেতে দেখল।

তার সেই রহস্যাবৃত চোখে সে ঋত্বিকার দিকে ফিরে তাকাল, তার অন্তরের শক্তিকে সে শান্ত করল। সময় ও কিওকোর পবিত্রতা দুইয়ে মিলে তাকে তার চারিপাশে অশুভের উপস্থিতির অনুভূতি দিচ্ছিল। অসমাপ্ত সেই যুদ্ধ শীঘ্রই শুরু হবে। আর এবার... সে আর আগের মত ভুল করবে না।

কিওকো বিশাল ভবনটার দিকে মাথা তুলে তাকাল। তার কাছে এটা তার অজানা অতীতের কোন মহান প্রাসাদের মত লাগছিল। সে নিজের মধ্যেই মুচকি হাসল। না হেসে সে পারল না। স্কলারশিপের কথাটা জানতে পেরে এবং এটা জানতে পেরে যে, সে এখন সত্যি-সত্যিই এখানে থাকতে চলেছে, সে অত্যন্ত আনন্দ পেয়েছিল।

সে তামার দিকে ফিরে তাকাল। তার ব্যাগ ও জিনিসপত্র গুছিয়ে দিতে তামা তাকে প্রচুর সাহায্য করেছিল। কিওকো তার মা এবং দাদুকে সে যে এখানে থাকতে যাচ্ছে তা বলতে পেরে এবং তাদের বিদায় জানিয়ে বেশ আনন্দ পেয়েছিল। এখন এই বিপুল স্বাধীনতার হাতছানি তার মনকে অনেকটা ঝরঝরে করে তুলেছিল। সে একটা দীর্ঘস্বাশ ফেলেল এবং তার আস্বাদ গ্রহণ করল।

“কি রে কিওকো, তুই কি সারা দিন ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি ভিতরে গিয়ে নিজের ছাত্রাবাসের ঘরটা খুঁজে নেবে?” তামা ধমকে উঠে বলল, যদিও গোটা দৃশ্যটা তাকেও বেশ মুগ্ধ করেছিল। তামা বিস্ময় দৃষ্টিতে মূল ফটকের দিকে যাবার মহীরূহ খিলানটাকে মাথা তুলে দেখছিল।

কিওকোর হাতে একটা মানচিত্র ধরা ছিল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঠিক দিকটাকে যুক্তকারী ওই বিশালাকার ভবনের উপর তার তর্জনী রেখেছিল। "ওটাই সেই ভবনটা হওয়া উচিত।" কিওকো পিছন ফিরে তাকাল এবং তামার উদ্দেশ্যে চোখ টিপল। "সকাল থেকে আমাকে এত সাহায্য করার জন্য তোকে ধন্যবাদ।"

তামা মুচকি হাসল, কিছুটা যেন বিব্রত বোধ করল। "কেন নয়, কিওকো, এইভাবেই আমি অন্তত কিছুদিনের জন্য হলেও তোর থেকে কিছুটা মুক্তি তো পাব, আর সেটাই অনেক।" সে কিওকোকে একেবারে বোল্ড-আউট করে দিয়েছিল মনে হল, কথাটা শেষ করে সে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।

কিওকো ওকে তাড়া করল আর তামা ছুটতে শুরু করল, কিন্তু কিওকো কিন্তু হঠাৎই থেমে গেল, কিওকোর মনে হল দুটো চোখ যেন ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

ঝটকা হওয়ায় কিওকোর চুল উড়ে-উড়ে আলোয় মাখা ওর সোনালি গালের উপর পড়ছিল যখন ও মাথা তুলে উপরে ভবনটার দিকে তাকাল সেই চোখ দুটোর খোঁজে যা তাকে দেখছিল বলে তার মনে হচ্ছিল, কিন্তু সে কারো দেখা পেল না। গত কয়েক বছরে সে অদ্ভুত কোন কিছুর অনুভূতি পাবার ক্ষমতা লাভ করেছিল, এবং সে বুঝতে পারছিল নিশ্চিত কেউ আছে... তাকে দেখছে। সে তার স্পর্শ অবধি পাচ্ছিল।

কিওকোর মনে হয়েছিল উপরের দিকে একটা জানালায় সে একটা গতিবিধি দেখেছিল, কিন্তু খেয়াল করে তাকানোর পর ও দেখল ওটা খালি, ওখানে কেউ-ই নেই। কিওকো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল এই ভেবে যে দুশ্চিন্তার কারণ বোধ হয় আর নেই। ও আলতো করে ওর নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে হতাশাটা কাটিয়ে ওঠার অপেক্ষা করল। এইবার সে তামাকে ধরে ফেলল কারণ ততক্ষণে সে দরজার মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করেছিল। দু’জনেই স্থির হয়ে চারিদিকটা একবার দেখল।

"এটা দারুণ জায়গা,” তামা উপরের দিকে তাকিয়ে তারপর একটু ঝুঁকে ভারি গলায় ফিসফিস করে বলল। “তোর হয়ত একটা মানচিত্রের দরকার হবে... তোকে যতটুকু চিনি, না হলে তুই এখানে পথ হারিয়ে ফেলবি।”

কিওকো সম্ভবত ওর এই সব কথা শুনলই না, কারণ ওর চোখ দুটো তখন হলের ভিতের দিকে ঘোর-ফেরা করছিল। যে ঘরটার মধ্যে ওরা দাঁড়িয়েছিল সেটা কিছু না হলেও তিনতলা সমান উঁচু ছিল এবং সিঁড়িটা ঘুরে-ঘুরে অন্য তলাগুলো অবধি যাচ্ছিল। ঘরের একদিকে একটা বিশালাকার গ্রন্থাগার ছিল, আর অন্য দিকটা দেখে একটা মনোরোঞ্জনের স্থান বলে মনে হচ্ছিল, আর ঠিক মাঝখানটায় ছাদ থেকে একটা ভীমকায় ঝাড়বাতি ঝুলছিল।

“হে ভগবান, ওটা যেন ধপাস করে পড়ে না যায়,” হাওয়ায় উড়তে থাকা চুল ঠিক করতে-করতে সে বলল।

ঝাড়বাতিটার ঠিক নিচেই বহুমূল্য আসবাবপত্রের সাজানো বসার জায়গা ছিল। ওখানে অনেক ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যস্ত হাঁটা-চলা লক্ষ্য করা যাচ্ছিল, যদিও সময়টা ছিল খুব সকালবেলা। কিওকো যত দ্রুত সম্ভব এখানে চলে আসতে চেয়েছিল, আর এখন ঘড়িতে মাত্র সকাল ৭:৩০টা বাজে। কিওকো দ্রুত তার হাতে থাকা কাগজপত্রগুলোকে আরেকবার দেখে নিল, ঠিক কোথাও ওকে যেতে হবে তা নিশ্চিত করে নেবার জন্য।

ঠিক তখনই সে তার কাঁধের উপর তামার হাতের স্পর্শ পেল এবং আঙ্গুল দিয়ে তাদের সামনে থাকা সেই ঘোরানো সিঁড়িটা দিয়ে উপরে যাবার ইঙ্গিত করল। কিওকো যেহেতু স্থায়ীভাবে থাকার জন্য সেখানে এসেছিল তাই তাদের দু’জনের মাঝখানে চার-চারটি সুটকেস ছিল, আর সেগুলো বেশ ভারি-ভারিই ছিল।

তামাকে বেশ হতোদ্যম দেখাচ্ছিল। “তুই কি ইংয়ার্কি করছিস নাকি!” সবচেয়ে বড় সুটকেসটার হাতলটা একবার তুলে মাটিতে ছেড়ে দিল কারণ সে জানত ওর নিচে থাকা চাকাগুলো এবারে আর কোন কাজে আসবে না। “আমার বয়স মাত্র ১২ বছর হলেও আমি তো আর চিৎকার করে কাঁদতে পারি না।”

সে তার সংকল্পকে প্রকাশ করার জন্য নিজের কাঁধ ঝাঁকাল একবার।

ঠিক তখনই তার পিছন থেকে এক পুরুষ কণ্ঠ জিজ্ঞাসা করে উঠল, "আপনি কি মিস কিওকো হোগো?", যা তাকে একেবারে হতচকিত করে দিল।

সে দ্রুত পিছনে ঘুরে উত্তর দিল, “হ্যাঁ।”

পিছন ফিরে সে খুবই হ্যান্ডস্যাম এক পুরুষকে দেখতে পেল এবং তার চোখের মণি যেন প্রসারিত হল। তার চকমপ্রদ এক জোড়া নীল চোখ ছিল এবং লম্বা-লম্বা কালো চুল ছিল, যা পিছনদিকে পনিটেল করে বাঁধা ছিল। কিওকো যখন বিস্ময় দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে ছিল তখন অদ্ভুত ঝোড়ো হাওয়া তার মুখ ছুঁয়ে বয়ে গেল। হাওয়ায় তার চুলের প্রান্তভাগ তার গাল স্পর্শ করল।

পুরষটি তার দিকে তাকিয়ে মৃদু ও আকর্ষক হাসি হাসল। তারপর, কিওকোকে আরও অবাক করে দিয়ে সেই পুরুষটি তুড়ি দিল এবং আরও দু’জন লোকে যেন শূন্য থেকে সেখানে এসে উপস্থিত হল, কিওকোর সুটকেসগুলো দেখল, এবং দ্রুত সেগুলোকে হাতে তুলে নিয়ে ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে উপরের দিকে উঠে যেতে থাকল। ওদের গতিবিধ দেখে কিওকোর চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছিল, কিন্তু সে মুখে কিছু বলার আগেই, সেই পুরুষটি নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে কিওকোর হাতটা ধরে ফেলল এবং নিজের ঠোঁটের কাছে টেনে এনে তার উপর কোন রাজকুমারের মতো করে চুম্বন করল।

"আমি কোতারো, আর তোমার মতো কোন সুন্দরীকে ভারি-ভারি জিনিস নিয়ে সিঁড়ি চড়তে আমি কিছুতেই দেখতে পারব না। আর এইবার তুমি যদি আমায় আজ্ঞা করো, তাহলে আমি তোমাকে তোমার ঘর অবধি ছেড়ে দিয়ে আসতে পারি।" কিওকোর হাত তার হাতের ধরেই কোতারো সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেল এবং তাকে নিয়ে সিঁড়ি চড়তে শুরু করে দিল।

তার আঙ্গুলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হওয়া তাপ সম্ভবত তার বাহুর মধ্যে দিয়ে তার গোটা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছিল... যা তার রক্ষকের রক্তকে উত্তেজিত করে তুলছিল। আর সেটা তাকে গোপন করতে হচ্ছিল। কোতারো এইবার কিওকোর হাতে সামান্য চাপ দিল এই ভেবে যে, এই সেই মেয়ে যার জন্য সে এতদিন অপেক্ষা করেছিল। কিওকোর ঘরের মধ্যে পা রাখতে-রাখতে কোতারোর মনে তেমন অনুভূতিই সঞ্চারি হচ্ছিল।

কিওকো তার কমনীয় ভ্রু কুঞ্চিত করে মনে-মনে হয়ত ভাবছিল, 'হে ঈশ্বর, আমাকে এই উদ্ধত পুরুষের হাত থেকে রক্ষা করো। এ আমি কোথায় এসে পড়লাম?'

কিওকো পিছন ফিরে তাকাল, আর তখনও হাঁ-করে তাকিয়ে থাকা তামার উদ্দেশ্যে একবার কাঁধ শ্রাগ করল। তারপর মাথা দুপাশে নাড়াল আর চোখের ভ্রু নাচিয়ে বলল, "তামা এরকম হাঁ-করে তাকিয়ে থেকো না, তোমার মুখে মাছি ঢুকে পড়তে পারে।" আর তারপরও তামা সম্বিত ফিরে পাবার আগেই সে আবার মাথা ঘুরিয়ে সেই তৎপর যুবকের পিছনে-পিছনে চলতে শুরু করে দিল, যার পরিচয় এখনও অবধি তার কাছে শুধুই কোতারো নামেই।

তার মনে মণিকোঠায় সে কিছু পরিকল্পনা করে রেখেছিল, যার মধ্যে তার ও তামার জন্য গোপন কিছু বিষয় ছিল। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে-উঠতে পিছনে সে তামার বড়-বড় নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছিল এবং এই সময়ে সে একটা জয়ের আনন্দ উপভোগ করছিল।

সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় তাদের পাশ দিয়ে আরেকটি যুবক নিচের দিকে নেমে গেল, এবং যখন সে তাদের টপকে চলে গেল তখন কিওকো তার বুকের মধ্যে একটা ক্রুশের ঝলকানি অনুভব করল এবং তার দম আটকে গেল। কিওকোর আশে-পাশের জগৎ এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেছিল যখন যুবকটি তার পাশ দিয়ে ধীর গতিতে নেমে যাচ্ছিল। তারপর যেই তার হৃদপিণ্ড আবার স্বাভাবিকভাবে স্পন্দিত হতে শুরু করল, সব কিছু আবার স্বাভাবিকভাবে প্রতীত হতে শুরু করে দিল এবং ওরা উপরে দিকে উঠে গেল।

কিন্তু ওই সময়টায় তার গোটা শরীর জুড়ে এমন এক অস্বাভাবিকতা প্রবাহিত হয়ে গেল যেন ওর কিছু খোয়া গেল... অথবা সে যেন কিছু একটা হারিয়ে ফেলল আর তার জন্য তার দারুণ অভাব অনুভূত হল। এই অস্বাভাবিক অনুভূতিকে ঝেড়ে ফেলার চেষ্টায় সে কে তার পাশ দিয়ে চলে গেল তা দেখার জন্য পিছন ফিরে তাকাল না। তার মনে হল এই মুহূর্তে সে না-ই বা জানল এ সব কথা।

কিওকো যে মনে-মনে বেশ মজা নিচ্ছিল তা ধরতে পেরে তামা ফিসফিস করে বলল, “যাক, এখানে আশে-পাশে তোমাকে তোষামোদ করার অনেক যুবক রয়েছে দেখে ভাল লাগল।”

সিঁড়ির একেবারে উপরে উঠে গিয়ে কোতারোর পিছনে-পিছনে একটা বড় বারান্দা ধরে এগিয়ে যেতে-যেতে কিওকো পিছন ফিরে তাকাল, যে বারান্দার দু’পাশে অনেক দরজা ছিল। তার মনে হয়েছিল এগুলোই হয় ছাত্র-ছাত্রীদের থাকার ঘর, কিন্তু তারা তার কোনটিতেই দাঁড়াল না। ওই বারান্দার শেষ প্রান্তে পৌঁছে একটা দরজা সামনে এলো যার উপর মোটা হরফে লেখা ছিল প্রবেশ নিষেধ। এইবার সে কিছুটা ধন্ধে পড়ে গেল যখন কোতারো ও সুটকেস-বাহক অন্য দুই পুরুষ সেই দরজা দিয়ে স্বচ্ছন্দে ঢুকে পড়ল যেন ঘরটা তাদের, আর আরও একধাপ সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেল।

তামা কিওকোর কাছে এগিয়ে এল এবং বলল, “আমার মন বলছে ওরা তোমাকে কোন অন্ধকূপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।”

কিওকো ওর কাঁধে হাত রেখে কিছুটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল, “আমরা উপরের দিকে যাচ্ছি গবেট, নিচের দিকে নয়।”

“তার মানে, ভবনের মাথায় কোন খালি ঠাণ্ডা ঘর আছে হয়ত,” তামা চটজলদি তার পিছন থেকে উত্তর দিল।

'যাই থাকুক না কেন আমি অন্তত কিছুটা ঠিকঠাকভাবে এখানে থাকতে পারব,’ কিওকো মনে-মনে এই কথা ভাবছিল যখন তারা এক প্রস্ত সিঁড়ির সামনে এসে উপস্থিত হল, তারপর তারা আরেকটা বারান্দায় এসে পৌঁছাল, কিন্তু এবারেরটা খুব সুন্দর ছিল। এর মেঝেটা শ্বেত পাথরের তৈরি মনে হচ্ছিল। দরজাগুলো একটা অপরটার থেকে অনেকটা করে দূরে ছিল। এই বারান্দায় মাত্র তিনটি ঘর ছিল, এবং কিওকো মনে-মনে কিছু উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছিল এই ভেবে যে, কোতারো হয়ত জানেই না শেষ অবধি তাকে কোথায় যেতে হবে।

কোতারো শেষ ঘরের দরজাটার কাছে এসে দাঁড়াল, সে মনে-মনে ভাবছিল এই মেয়েটি নিশ্চয়ই খুব বিশেষ কেউ হবে কারণ এই বারান্দায় অনেকের প্রবেশাধিকারই নেই, এবং গোটা ক্যাম্পাসের মধ্যে এই ঘরটাই সবচেয়ে ভাল ছিল। কোতারো দরজার সামনে এসে কিওকোর ও তার বন্ধুর এসে পৌঁছানো অবধি অপেক্ষা করল।

কিওকোকে কিছুটা বিক্ষিপ্ত দেখে কোতারো মুচকি হাসল। সে বুঝতে পারছিল কিওকো কিছুটা দুশ্চিন্তায় রয়েছে। সে তার চিন্তিত চোখ দুটোর উপর দৃষ্টি রাখল এবং বুঝতে পারল কিওকোর হৃদস্পন্দন দ্রুত হচ্ছে, কিন্তু এই মুহূর্তে সে তাকে যা বলা হয়েছে সেটাই করতে চাইল।

সে কিওকোর দিকে তাকিয়ে তার বাহু প্রসারিত করে, হাতের তালু খুলে ইশারা করল। "এবার আমি বিদায় নেব, কিন্তু তোমার যদি কোন কিছুর দরকার হয়..." কোতারো কিওকোর হাতে সেই ঘরের চাবি তুলে দিল এবং তার দিকে এমনভাবে তাকাল যা কিওকোকে কিছুটা লজ্জিত করল, আর তারপর সে কাঁধ ঝাঁকিয়ে সঙ্গে থাকা দুই যুবককে তার পিছনে আসতে নির্দেশ করল।

কিওকো ও তামা উভয়েই পিছন ফিরে তাদের ততক্ষণ অবধি দেখে যেতে লাগল যতক্ষণ না তারা তাদের দৃশ্যপটের বাইরে চলে গেল, তারপর কিওকো দরজার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। দরজার উপরেই একটা নামের ফলক দেখা যাচ্ছিল যাতে স্পষ্ট করে সোনালী অক্ষরে কিওকো হোগো লেখা ছিল।

তামা বোনের কাঁধে হাত রেখে ঝাঁকিয়ে দিয়ে মুচকি হাসল। "এভাবে হাঁ-করে তাকিয়ে থাকলে তোমার মুখে মাছি ঢুকে পড়তে পারে।"

কিওকো এই কথা শুনে চোখ পাকাল, কারণ তার কথাই যে তার কাছে এভাবে ফিরে আসতে পারে সে তা ভাবেনি। চাবিটা দিয়ে সে ঘরের দরজার তালা খুলে আস্তে করে দরজাটাকে খুলল এবং ভিতরের দিকে তাকাল।

ঘর দেখে তামার চোখ ছানা-বড়া হয়ে গেল, আর সে কিওকোকে ঠেলে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল। “হতেই পারে না! এতো আমাদের গোটা বাড়িটার চেয়েও বড় একটা ঘর দেখছি।" তার বিস্ময়-মাখা শব্দ গোটা ঘরে প্রতিধ্বনিত হতে লাগল। “তুই তো এর মধ্যেই একটা আস্ত নাচের ক্লাব খুলে ফেলতে পারিস।”

“আমার অন্ধকূপ তাহলে তোল পছন্দ হয়েছে বল?” কিওকো তার ভাইয়ের সকালের ঠাট্টার জবাব দিল।

*****

দু’ঘণ্টা পরে, তামাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেবার অনেক পর, কিওকো তার ঘরের বাথরুমের তাকে তার জিনিসপত্রগুলো সাজিয়ে রাখছিল। সে আবারও ঘুরে তার বাথটাবটার দিকে দেখল যেটা এতটাই বড় যে পাঁচজন একসঙ্গে চান করতে পারে।

"হতেই পারে না!", সে তার ভাইয়ের এই বিস্ময়মাখা অভিব্যক্তিটার পুনরাবৃত্তি করল।

সে তার মাথার চুল তার ঘাড় থেকে উপরের দিকে উঠে রয়েছে এমনটা অনুভব করল, এবং আবার মনে-মনে ভাল এটা হয়ত তার ভুল। “হ্যাঁ,” সে ফিসফিস করে নিজে-নিজেই বলল। কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়ত কেউ একটা আসবে এবং তাকে তার জিনিসপত্র গুছিয়ে নিতে বলবে। সে ভেবেই রেখেছিল যে, সে ভুল করে ভুল একটা ঘরে চলে এসেছে।

কিওকো বাথরুম থেকে বেরিয়ে এল এবং আবারও একবার ওর ঘরের বিছানার দিকে তাকাল। বিছানাটা তার দেখা এখনও অবধি সব থেকে বড় বিছানা ছিল, আর আগে থেকেই সেটা তৈরি করা অবস্থাতেই ছিল, আরামে মোড়া কম্বল আর সব কিছু নিয়ে। অতি সুন্দর করে সাজানো ঘরটা হালকা বেগুনি আর নীল রংয়ে মোড়া ছিল, যেগুলো ঘরের কার্পেট আর বিছানার চাদরের রং। তার উপর গাঢ় লাল রংয়ের ছোপ-ছোপ ডিজাইন ছিল, এবং হারিয়ে যাওয়া যেতে পারে এত বড় একটা আলমারি ছিল।

সে আস্তে-আস্তে বসার ঘরের মধ্যে প্রবেশ করল যার সবকিছুই কালো আর সোনালি রংয়ের ছিল, আর তাতে সব কিছু আগে থেকে সাজানো ছিল যা একজন মানুষের প্রয়োজন হতে পারে। কিওকো আগেই তার রান্না ঘরটা দেখে নিয়েছিল। সেটা প্রয়োজনীয় সবকিছুতে ঠাঁসা ছিল। কিওকো অগুণতিবার ইতাবাচক ভঙ্গিতে তার মাথা নেড়ে গেল। "হতেই পারে না।" এখন তার ঠিক কী করা উচিৎ তাই ভাবতে-ভাবতে সে তার নিচের ঠোঁট কামড়াতে থাকে। দিনটা ছিল শনিবার, আর সোমবারের আগে তো ক্লাস শুরু হবে না।

“ভাই, গোটা দিন আমি এখানে লুকিয়ে বসে থাকতে পারব না,” সে বিড়বিড় করে স্বগতোক্তি করল।

অনধিকার প্রবেশ করে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে এমন একটা ভাব নিয়ে কিওকো আস্তে-আস্তে দরজাটা খুলে মাথাটা বের করে বাইরের বারান্দাটার দিকে তাকাল। কাউকেই না দেখতে পেয়ে, সে ঘর থেকে বেড়িয়ে ঘরের দরজাটা দিয়ে দিল, তারপর গুটি-গুটি পায়ে যে সিঁড়িটা নিচের দিকে চলে গেছে সেটার দিকে এগিয়ে গেল।

আর তখনই আবারও তার মনে হতে লাগল কেউ তাকে দেখছে, আর তাতেই তার শিরদাঁড়া দিয়ে ঠাণ্ডা স্রোত নেমে গেল, কিন্তু সে হাঁটা থামালো না, যদিও পিছন ফিরে দেখার সাহসও করল না।

‘ও আমাকে অনুভব করতে পারছে,’ কিউ মনে-মনে ভাবল। ওর শক্তি হয়ত ততটা গভীরে গেঁথে যায়নি যতটা সে মনে করছিল। ঘর থেকে বেরোবার সঙ্গে-সঙ্গেই সে সেটা অনুভব করতে পেরেছিল আর সে তার সুগন্ধও পেয়েছিল... তার আস্বাদ গ্রহণ করেছিল।

তার সুগন্ধের স্মৃতি অন্যান্য সমস্ত স্মৃতিকেই তাজা করে দেয়। "ঋত্বিকা, আমরা শীঘ্রই তোমার শক্তি আবার ফিরিয়ে আনব। তুমি তা লুকিয়ে রাখতে চাইতে পার... কিন্তু বেশি দিন তুমি তা পারবে না।" বারান্দার দেওয়াল থেকে সে ঝুঁকে দেখছিল, তার সোনালী চোখ কিওকোকে ততক্ষণ অবধি অনুসরণ করল যতক্ষণ সে দৃষ্টির বাইরে চলে না গেল।

*****

নিচে নেমে কিওকো যেন একটু হাঁফ ছাড়ল। এখন সে এখানে তার বয়সের অনেক ছেলে-মেয়েকে দেখতে পেল। উপরের তলার সমস্ত বিস্ময় ও বিহ্বলতা এক দীর্ঘশ্বাসে ঝেড়ে ফেলে কিওকো এখানে যেন নিজের জন্য আলাদা করে কিছুটা মুহূর্তের সন্ধান পেল।

নিজের চেতনা যখন কাউকে বিহ্বল করে তোলে তখন তা থেকে নিজেকে মুক্ত করাটা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক সময় তার মনে হয় তার এই ধরনের চেতনা একেবারেই না এলে সে হয়ত শান্তিতে বাঁচতে পারে। ভবনের এক তলার এই বিরাট হল ঘরে এসে সে তার মনের মধ্যে চলে আসা সেই সব চেতনাকে মনের সুদূর কোণে ঠেলে দিল। “এটা চালু ও বন্ধ করার একটা সুইচ পেলে ভাল হত,” সে বিড়বিড় করে বলল, কিন্তু সাথে সাথে একটু আগেই মনের মধ্যে যে অদ্ভুত কম্পণ হচ্ছিল তাকেও অনুভব করতে পারছিল।

সে গ্রন্থাগারের দিকে তাকাল, আর তারপর দ্রুত পিছন ফিরে ওদিকটা দেখে নিল। সে আসলে গোটা জায়গটা সম্পর্কে ভালভাবে জেনে-বুঝে নিতে চাইছিল। সে যতদূর মনে করতে পারে, শারীরিক কসরত করে চলাটা তার অভ্যাসের একটা অংশ এবং এখানেও সে তার বাইরে থাকতে রাজি নয়। গত দু’বছর ধরে সে সব ধরনের মার্শাল আর্ট শিখছিল, এবং এর ফলে তার গোটা শরীরে যে ধরনের স্বাচ্ছন্দ এসেছিল তা তার খুবই পছন্দের ছিল।

বিনোদনের ঘরগুলো পেরিয়ে গিয়ে সে একাধিক শারীরিক কসরতের জায়গা বা জিম দেখতে পেল। এগুলোর মধ্যে বড় একটা জিমের একটা কাঁচের দেওয়ালের মধ্যে দিয়ে বাইরেটা দেখা যাচ্ছিল। কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়িয়ে ওই কাঁচের দেওয়ালের মধ্যে দিয়ে কয়েক মুহূর্তের জন্য বাইরের দৃশ্যটা না দেখে সে পারল না। ও পাশে দু'জন লোককে দেখা যাচ্ছিল যারা তলোয়ার লড়াইয়ের মতো কিছু একটা করছিল। দুটি ধাতব জিনিসের মধ্যে আঘাতে তৈরি হওয়া শব্দ কানে আসায় সে তার চোখের ভ্রু তুলে তাকাল। দরজার কাছে এগিয়ে গিয়ে সে কান খাঁড়া করে শোনার চেষ্টা করল।

"তুমি কিন্তু মনোযোগ দিচ্ছ না, সুকি" কালো রংয়ের পোশাক পরা একটা লোক পুরষ কণ্ঠে তার নিচে থাকা একজনের আক্রমণ ঠেকাতে-ঠেকাতে এই কথাগুলো তাকে বলছিল।

কিওকো কারোরই মুখ দেখতে পাচ্ছিল না কারণ তারা উভয়েই মুখে এক ধরনের রক্ষাকবচ পরে ছিল।

"শিনবে!" ক্রুদ্ধ মহিলা কণ্ঠ শোনা গেল। আর তারপরই কোন প্ররোচনা ছাড়াই ওই ব্যক্তি আঘাত হানল এবং তার মাথায় আঘাত করল, অনেকটা একটা বেতের তলোয়ার দিয়ে, আর তাতেই তার মাথার ঢাকনাটা খুলে গেল।

ঢাকনার মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসা লম্বা বাদামী রংয়ের চুলের ঢল দেখে কিওকো অবাক হয়ে গেল, যে সঙ্গে-সঙ্গে নিচে থেকে তার উপরে থাকা পুরুষটিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল এবং ভ্রু কুঁচকে উঠে দাঁড়াল। "এত লেকচার দিলে মনোযোগ দিয়ে লড়া যায় না।”

শিবনে হাসতে-হাসতে তার মাথার পুরো রক্ষাকবচ খুলে ফেলল। হাল ছাড়ার ভঙ্গিতে সে তার বাহু দুটো উপরে তুলে ধরে পিছিয়ে গেল। "আমি দুঃখিত, সুকি কিন্তু এটাই আমি বলছিলাম... তুমি ঠিক মতো আত্মরক্ষা করছিলে না।" শরীর জুড়ে একটা ঝনঝনানির প্রবাহ অনুভব করে সে ভ্রু কুঁচকে তাকাল, আর তারপর দরজায় দাঁড়ানো মেয়েটির উপর তার নীল চোখের দৃষ্টি রেখে সে বলে উঠল, “আহা, আমাদের একজন দর্শক রয়েছে মনে হচ্ছে।”

কিওকো দেখল সুকি নামে যে মেয়েটাকে ডাকা হচ্ছিল সে কিছুটা লজ্জিত দৃষ্টিতে তার প্রতিপক্ষের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর পিছন ফিরল এবং মুখে চওড়া হাসি নিয়ে তার দিকে এগিয়ে এল।

"এই যে,” বলে সুকি পুরোন বন্ধুর মতো করে তার হাত দুটো বাড়িয়ে দিল, "আমার নাম সুকি, আর আমার থেকে কৈফিয়ৎ চাওয়া এই লোকটা হল শিনবে,” বলে তার বুড়ো আঙ্গুলটা পিছনে ইঙ্গিত করে তার পিছনে মুচকি হাসি হাসতে-হাসতে এগিয়ে আসা পুরষটিকে দেখাল।

“সুকি,” শিনবে বলে যার পরিচয় দেওয়া হল সেই যুবক বলল। “তুমি আমাকে হঠাৎ করে আমাকে আঘাত করেছিলে।” এই বলে সে তার হাত দুটো নিজের বুকের উপর রেখে তার কথার সত্যতা বোঝাতে চেষ্টা করল।

তা শুনে সুকি ভ্রু কুঁচকে বলল, “শিনবে… আমি যদি তোমাকে সত্যিই আঘাত করতাম তাহলে এতক্ষণে তোমার মাথাক ঘিলুটা তোমার কান দিয়ে বেরিয়ে যেত।”

শিনবেও তার ভ্রু ততধিক বিস্ময়ে কুঁচকে বলল, “তুমি জান আমি তোমার রুক্ষ ভালবাসা পেতে ভালবাসি।”

“আমি এক্ষুণি তোমাকে সেই রুক্ষ ভালবাসা আবার দিতেই পারি, কিন্তু আমি এই নতুন মেয়েটাকে তা দিয়ে ভয় পাইয়ে দিতে চাইছি না,” সুকি চকিতে উত্তর দিল।

এরই মধ্যে কিওকোর ওকে পছন্দ হয়ে গেছে, আর তাই সুকির বাড়িয়ে দেওয়া হাত সে জোরে চেপে ধরল এবং হাসল। "আমার নাম কিওকো হোগো, কিন্তু তোমরা আমাকে শুধুই কিওকো বলতে পারো।"

সুকির পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার দিকে সে তাকাল। “তোমাদের দু’জনের সঙ্গেই মিলিত হয়ে খুব ভাল লাগল।” ওই যুবকের চোখে কিছু একটা ছিল যেটা কিওকোর মনোযোগ আকর্ষণ করল। চোখ দুটির রং অসাধারণ নীল এবং খুবই মনোরম ছিল। তার মাথার চুল তার কাঁধেরও কিছুটা নিচে নামে এবং তা ঘন কালো এবং তাতে নীল হাইলাইট রয়েছে। তার চেহারা-ছবি কিওকোকে কিছুটা ৮০-র দশকের রক গায়কদের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল।

সুকির মুখে চওড়া হাসি ছিল। "আমি কিন্তু তোমার ব্যাপারে শুনেছি। হ্যাঁ, আর আমি এ-ও জানতাম যে, তুমি আজ আসছ। আমি আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তোমার খোঁজে বেরোতাম এবং তোমাকে ঠিক খুঁজে বের করে নিতাম।” সুকি হঠাৎ করে ওর মুখের দিকে একটু কাতর দৃষ্টিতে তাকাল এবং তার মাথাটা একদিকে ঘুরিয়ে শিনবের উপর দৃষ্টি রেখে বলল, “তোমার জায়গায় আমি হলে আমি তা করব না।”

কিওকো তার মাথা কাত করে দেখল। অবশ্যই... ছেলেটার হাত মাঝ পথে থেমে গেছিল, যা সুকির পিছনটা প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছিল, এবং সে দুষ্টুমি-মাখা হাসি হাসছিল।

শিনবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের হাতটা নামিয়ে নিল, “ পিছনে না দেখেও তুমি কীভাবে বুঝতে পার একদিন আমি তা ঠিক ধরে ফেলব।”

সুকি গম্ভীর কণ্ঠে বলল, “আমি এটা পারি, আর সেটাই সব!” কিওকোর দিকে মিষ্টি হাসি নিয়ে তাকিয়ে সে বলল, “আমার সঙ্গে চলো, আমি এক সেকেন্ডের মধ্যে জামা-কাপড় বদলে নিচ্ছি।” সে কিওকোর হাতটা ধরে তাকে টেনে দরজার বাইরে নিয়ে চলে গেল।

কিওকো পিছন ফিরে শিনবের দিকে তাকাল যে তাদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়ছিল। ‘এই দু’জনের সাথে প্রচুর মজা করা যাবে,’ এই ভাবতে-ভাবতে সে সুকির সাথে মহিলাদের লকার রুমের দিকে এগিয়ে গেল।

সুকি ইতিমধ্যেই বলে দিয়েছিল যে সে কিওকোকে পছন্দ করে, এবং যে কোন কারণেই হোক, তার মনে হয় সে কিওকোকে জানে, এমনকি আগে কখনও তার সঙ্গে মিলিত না হয়েও। “আমি পোশাক বদলাতে-বদলাতে তুমি বরং তোমার ব্যাপারে কিছু বল,” এই বলে সুকি তার জামা-কাপড় নিয়ে দেওয়ালের আড়ালে চলে গেল।

সুকির সঙ্গে পুরোপুরি স্বচ্ছন্দ বোধ করায় কিওকো আরাম করে সেখানে থাকা বেঞ্চিতে বসল। “দেখো, আমি এই শহরের অপর প্রান্তের একটা ছোট্ট শহরতলি থেকে আসছি। আর যে কোন কারণেই হোক, খুবই অপ্রত্যাশিতভাবে, আমি একটি চিঠি পাই যাতে এখানে ছাত্রবৃত্তি, মানে স্কলারশিপ, পাবার কথা লেখা ছিল।” ওপাশ থেকে সুকির “হুম” শুনতে পেয়ে কিওকো বলে চলল। “আমি জানি না এই স্কলারশিপ আমি কীভাবে পেলাম, আমি তো এর জন্য আবেদনও করিনি কখনও।”

সুকি তার এই কথার মধ্যেকার জিজ্ঞাসা অনুভব করতে পেরে দেওয়ালের পিছন থেকে মুখ বের করে একটু হাসল। “ওটা নিয়ে ভেবো না। তুমি যেভাবে এসেছো আমিও সেইভাবেই এখানে এসেছিলাম।” “আমি কখনোই এখানে ভর্তির আবেদন করিনি,” এই কথা বলে সুকি আবার দেওয়ালের পিছনে চলে গেল।

কিওকোর ভ্রু কুঞ্চিত হল, “কিন্তু কেন? কোন কারণ তো থাকতেই হবে। তোমার জানা আছে কি সেটা?"

সুকি তার পোশাক বদলে বাইরে বেরিয়ে এল। সে তার টেনিস জুতো পরার জন্য বেঞ্চিতে বসল। “হ্যাঁ, আমি ব্যাপারটা ধরতে পেরেছি। পুরোটা না হলেও কিছুটা তো বটেই। এই স্কুলটার অধিপতি সেই সব লোকেদের খোঁজে থাকে যারা...” সুকি একটু থামল, তারপর মাথাটা কিওকোর দিকে ঝুঁকিয়ে বলল, “...অনন্য ক্ষমতার অধিকারী।” সেই সঙ্গে কাঁধ ঝাঁকিয়ে এ-ও বলে দিল, “তুমি যখন এখানকার অন্যান্য আবাসিকদের সঙ্গে মিলিত হবে তখন এরকম অনেক কিছুর সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে।” সে মুচকি হাসল, যার ভাবটা এরকম যে, সে যা জানে সেটা ঠিক।

সুকি হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল এবং লকারের দরজার উপর একটা জুতো ছুড়ে মারল, আর কিছুটা জয়ের হাসি হাসল যখন দরজার ওপার থেকে কাউকে গালাগাল দিতে শোনা গেল। সুকি জুতোটা কুড়িয়ে নিয়ে এসে সেটাকে পায়ে বাঁধতে লাগল। “এইবার বলো, তোমার মধ্যে অনন্য কী ক্ষমতা রয়েছে?”

কিওকোর মস্তিস্কে এত রকম কিছু চলছিল যে ক্লান্তিতে তার প্রায় দম বন্ধ হয়ে আসছিল। এখানে কোনভাবেই কেউ এ কথা জানতে পারে না সে একজন ঋত্বিকা। সে ভ্রু কুঁচকে সুকির দিকে তাকাল এবং দ্রুত চারিদিক একবার দেখে নিয়ে উত্তর দিল, “আমার তো তেমন কিছু আছে বলে জানা নেই।”

সুকি তার এক চোখে ভ্রু তুলল, যা অবিশ্বাসের পরিচায়ক, কিন্তু তারপরই তার কাঁধ এমন ভঙ্গিতে ঝাঁকালো যার মানে এই হয় যে, সে আজ না হোক কাল তার হদিশ লাগিয়েই ফেলবে। “চলো, এবার যাই। শিনবে হয়ত আমাদের জন্যই অপেক্ষা করে রয়েছে।” সে দরজাটা খুলল এবং দেখল তাই-ই, শিনবে দরজার ঠিক বাইরেই দাড়িয়ে রয়েছে, এবং সে এতটাই কাছে ছিল যে, সে হয়ত ওদের কথাগুলো শুনতেও পাচ্ছিল। সে ওদের দিকে তাকিয়ে বোকার মতো হাসল এবং কিছুটা পিছনে পিছিয়ে গেল।

ওরা বাইরে বেরিয়ে এসে সুকি দরজাটা বন্ধ করে দিল এবং দরজায় লেখা বোর্ডটার দিকে তর্জনী নির্দেশ করল। "শিনবে, ওটা পড়োনি তুমি? ওটাতে মহিলাদের লকার রুম কথাটা লেখা আছে।” এই বলে সুকি ওর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল।

শিনবে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, “হ্যাঁ, সেই জন্যই তো আমি ওর বাইরেই দাড়িয়েছিলাম।” সুকি ওর দিকে সজোরে হাত ছুড়লে শিনবে দ্রুত তাকে পাশ কাটাল। “সুকি... আমি একটা ছেলে... আমার স্নেহ-ভালবাসার দরকার। আর সেটা পাবার জন্য এর থেকে ভাল উপায় আর কী হতে পার যে, আমি এ ব্যাপারে জানবার চেষ্টা করি যে মেয়েদের মস্তিস্কে কী চলছে?”

“তুমি লাইব্রেরিতে গিয়ে তোমার গবেষণা চালাতে পারো,” সুকি দাঁত কিড়মিড় করে তাকে বলল।

শিনবে মুচকি হাসল। “দেখো সুকি, ওই লাইব্রেরিতে রাখা মেয়েদের মন সংক্রান্ত সমস্ত বইগুলোর পাতাই... একেবারে খালি।”

সুকি হেসে ফেলল, “তার কারণ, লাইব্রেরির ওই বইগুলো সবই কোন না কোন ছেলের লেখা।”

সুকির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে শিনবে ওর দিকে ঝুঁকে বলল, “ঠিক তাই। আমি সেই প্রথম ব্যক্তি হতে চাই যে এমন বই লিখবে যা আমাদের, মানে টেস্টোস্টেরন বহনকারী পুরুষ জাতিকে কাজের কথা জানাবে।”

সুকি দ্রুত একবার কিওকোর মুখের দিকে তাকাল, আর তারপর নিজের হাতঘড়িটার দিকে দেখল। "কি, তোমার কি খিদে পেয়েছে? চলো, স্টুডেন্ট রেস্তোরাঁয় যাই, গিয়ে আগে কিছু খাই।”

কিওকো মাথা নাড়ল। কিওকো সকাল থেকে এতটাই নার্ভাস ছিল যে কিছু খাবার কথা তার মনেই ছিল না, কিন্তু এই দুজনের সঙ্গে সে কিছুটা বাড়ির লোকের মতো অনুভব করছিল, আর তাই এইবার তার খিদে পেল।

শিনবে তার একটা হাত তুলে বলে উঠল, “লেডিজ ফার্স্ট।” এই সময় সুকি তাকে তার মাথায় সজোরে একটা ঘুঁষি বসিয়ে দিল আর শিনবে চিৎকার করে উঠল।

“আগেরবার তোমায় মারতে পারিনি... এবার আগে চলো,” সুকি অভিযোগী দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলল। শিনবে তাদের আগে-আগে চলা শুরু করলে, সুকি মুখে মুচকি হাসি নিয়ে কিওকোর দিকে ঝুঁকে বলল, “সব সময় ওকে তোমার সামনে রাখার চেষ্টা করবে, না হলেই তোমাকে খারাপ লাগার ঝামেলা সহ্য করতে হবে কিন্তু।”

কিওকো আর না হেসে সে পারল না। কিওকোর হাসি শুরু হল আর থামতেই চাইল না যতক্ষণ না তারা ওর মধ্যেই থাকা খাবার ঘরের মধ্যে পৌঁছাল, যেটা কিওকোর কাছে খাবার হোটেলের মতো লাগল। সে যতই সুকির কাছে এগিয়ে গেল তার চোখে প্রসারিত হতে থাকল। “বুঝলে, আমি যতবার এখানে আসি আমার মনে হয় আমি ভুল জায়গায় চলে এসেছি।”

শিনবে তাদের ওই ঘরের পিছনের দিকের একটা টেবিলে নিয়ে গেল। সুকি আর কিওকো টেবিলের একদিকের বেঞ্চে বসল আর শিনবে অপর দিকের বেঞ্চটায়, ওকে এমন দেখাচ্ছিল যেন ও বিশ্বের সবচেয়ে নিরীহ একটি ছেলে। “বুঝলে, এই জায়গাটায় অভ্যস্ত হতে কিন্তু বেশ সময় লেগে যাবে।” এই বলে শিনবে কিওকোর দিকে তাকিয়ে হাসল এবং ওর নীল চোখ দুটোকে যেন প্রজ্জ্বলিত করল। “আমি এক বছর হয়ে গেল এখানে এসেছি, কিন্তু এখনও এখানটায় ঠিক মতো অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারিনি।”

সুকি কিওকোর কাঁধে ধাক্কা দিয়ে বলল, “ও সেইভাবেই এখানে এসেছে যেভাবে আমি আর তুমি এখানে এসেছি। একটা খোলা আমন্ত্রণ পেয়ে।” এই তথ্য দিয়ে ও এমন ভঙ্গিতে কাঁধ ঝাঁকালো যেন ও কিওকোকে বলতে চায় ওর ব্যাপারটাকে এবার মেনে নেওয়া উচিৎ এবং আনন্দে থাকা উচিৎ।

কিওকো কিছুটা বিভ্রান্ত দৃষ্টিতে সুকির দিকে তাকাল, “ঠিক বুঝলাম না। এদের এরকম করার কারণটা কী?"

শিনবে এমনভাবে তার মাথটা নাড়ল যেন সত্যিটা কী তা কারুর তাকে বুঝিয়ে বলা উচিৎ। “আমার নির্দিষ্ট কিছু ক্ষমতা রয়েছে, সুকিরও তা রয়েছে।” এই বলে শিনবে কিওকোর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে কাঁধ ঝাঁকালো। “স্কলারশিপ নিয়ে এখানে পড়তে আসা সবারই রয়েছে।” তারপর সঠিক শব্দটা চয়ন করার জন্য সে কিছুটা থামল এবং তারপর বলল, “আমাদের সকলেরই কোন না কোন বিশেষ প্রতিভা রয়েছে।” এই বলে সে সুকির দিকে তাকিয়ে এক চোখের ভ্রু তুলল, "তুমি এখনও ওকে বলোনি কিছু?"

সুকি দ্রুত মাথা নেড়ে জানিয়ে দিল ও বলেনি এবং তারপর কিওকোর দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করেই বিষয়টা বদলাতে চাইল, “তোমরা কি চাই, হ্যামবার্গার আর ফ্রাই?”

কিওকো মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল, আর সুকি সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়াল, ঠিক যেন ও ফ্রি স্কলারশিপের বিষয় নিয়ে আর কোন প্রশ্ন এড়াতে চাইছিল, “আচ্ছা, বসো, আমি এক্ষুণি আসছি, ঘাবড়াবার কিছু নেই। যারা স্কলারশিপ পেয়ে এখানে আসে তাদের জন্য খাবার-দাবার ফ্রি আর ওরা সেগুলি আমাদের কাছে পৌঁছেও দিয়ে যায়।” সুকি শিনবের সঙ্গে কিওকোকে রেখে অর্ডার দিতে চলে গেল।


Страницы книги >> Предыдущая | 1 2 3 4 5 | Следующая
  • 0 Оценок: 0

Правообладателям!

Данное произведение размещено по согласованию с ООО "ЛитРес" (20% исходного текста). Если размещение книги нарушает чьи-либо права, то сообщите об этом.

Читателям!

Оплатили, но не знаете что делать дальше?


Популярные книги за неделю


Рекомендации